আবৃতবীজী উদ্ভিদের যৌন জনন পদ্ধতি উগ্যামাস প্রকৃতির । অপেক্ষাকৃত বড় ও নিশ্চল স্ত্রীগ্যামেট বা ডিম্বাণু-র সাথে ছোট ও সচল পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু-র যৌন মিলনে নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ সময় গর্ভাশয় ও ডিম্বক নিঃসৃত পদার্থে Ca++" আয়ন উপস্থিত থাকে।
নিষেক প্রক্রিয়াটিকে নিম্নলিখিত ধাপের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়।
১. পরাগরেণুর অঙ্কুরোদগম : পরাগরেণু উপযুক্ত গর্ভমুক্তে পতিত হলে সেখান থেকে তরল রস শোষণ করে আকারে বড় হয় এবং অঙ্কুরিত হয়ে পরাগরেণুর পাতলা অভ্যন্তর প্রাচীর প্রসারিত হয়ে রজপথে নলরূপে বেরিয়ে আসে।
২. পরাগনালিকার গর্ভাশয়মুখী যাত্রা ও শুক্রাণু সৃষ্টি : পরাগনালিকাটি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে গর্তমুক্ত থেকে গর্ভদন্ডের ভেতর দিয়ে গর্ভাশয় পর্যন্ত পৌঁছায় এবং গর্ভাশয়ের স্তর ভেদ করে ডিম্বক পর্যন্ত চলে আসে। ইতোমধ্যে পরাগনালিকার ভেতরে অবস্থিত জনন নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু সৃষ্টি করে। অধিকার। উদ্ভিদে পরাগনালিকা ডিম্বকরন্ধ্র পথে ডিম্বকে প্রবেশ করে (porogamy) কিছু কিছু উদ্ভিদে (যেমন, Casuarina, ঝাউ, পরাগনালিকা ডিম্বকমল দিয়ে ডিম্বকে প্রবেশ করে Chalazogany) কতিপয় ক্ষেত্রে (যেমন- . কুমড়া) পরাগনালিকা (ডিম্বকত্বক বিদীর্ণ করে প্রবেশ করে লাভmesogamy)। সাধারণত শুক্রাণুসহ একটি মাত্র নালিকাই ডিম্বকে প্রবেশ করে থাকে।
৩. পরাগনালিকার ডিম্বকস্থ ভূণথলিতে প্রবেশ ও শুক্রাণু নিক্ষিপ্তকরণ : পরাগনালিকা প্রথমে গর্ভাশয়ের স্তর ভেদ করে ডিম্বকে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে ডিম্বকে অবস্থিত স্ত্রীরেণু হতে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় (ডিম্বাণু ভ্রুণথলিতেই অবস্থান করে। পরাগনালিকা শেষ পর্যন্ত ভূণথলিতে প্রবেশ করে। ভ্রূণথলিতে প্রবেশ করে এটি সহকারী কোষের উপর দিয়ে ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছে। পরে পরাগনালিকার অগ্রভাগ প্রসারিত হয়ে ফেটে যায় এবং পুংগ্যামেট ভ্রুণথলিতে নিক্ষিপ্ত হয়।
৪. ভূণথলিতে ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণুর মিলন : পরাগনালিকা থেকে ভ্রুণথলিতে নিক্ষিপ্ত দুটি পুংগ্যামেটের মধ্যে একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত ও একীভূত হয়ে যায় অর্থাৎ নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে। এ ধরনের মিলনকে সিগ্যামি (syngamy) বলে । এপর পুংগ্যামেটটি সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত ও একীভূত হয়। এ ধরনের মিলনকে ত্রিমিলন (triple fusion) বলে।
দ্বি-নিষেকক্রিয়া (Double fertilization)
একই সময়ে ডিম্বাণুর সাথে একটি পুংগ্যামেটের মিলন ও সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে অপর পুংগ্যামেটের মিলন প্রক্রিয়াকৈ দ্বি-নিষেকক্রিয়া বা দ্বি-গর্ভাধান প্রক্রিয়া, বলে ) ১৮৯৮ সালে নাওয়াসিন (Nawaschin) আবৃতবীজী উদ্ভিদে দ্বিনিষেক আবিষ্কার করেন। Williams Friendman ১৯৯০ সালে (aphedranevadensis নামক নগ্নবীজী উদ্ভিদেদ্বিনিষেক আবিস্কার করেন। এ প্রক্রিয়ায় একটি পুংগ্যামেট ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং অপর পুংগ্যামেট সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয়; ফলে ডিম্বাণু জাইগোট-এ পরিণত হয় এবং ডিপ্লয়েড (2n) অবস্থা প্রাপ্ত হয়। অপরদিকে সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস ট্রিপ্লয়েড (3n) অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এটি কয়েকবার বিভাজন ও বিকাশের মাধ্যমে সস্য টিস্যু গঠন করে। এ সস্য ভ্রূণের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সস্যটিস্যুতে প্রচুর পরিমাণ স্টার্চ, লিপিড ও প্রোটিন জমা থাকে।
সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে পুংগ্যামেটের মিলনকে ত্রিমিলন বলা হয়, কারণ এতে দুটি মেরু নিউক্লিয়াস ও একটি পুংনিউক্লিয়াসসহ তিনটি নিউক্লিয়াসের মিলন ঘটে। নিষেকের পর গর্ভাশয়ে বিভিন্ন পরিবর্তনের শেষ পর্যায়ে ডিম্বক বীজ (seed)-এ এবং গর্ভাশয় ফল (fruit)-এ পরিণত হয়।
ভ্রূণের উৎপত্তি (Development of embryo): নিষেকের পর জাইগোট পুরু প্রাচীর দিয়ে আবৃত হয় এবং কিছু সময় বিশ্রাম নেয় । জাইগোটের বিশ্রাম কেটে গেলে প্রথম বিভাজন সাধারণত আড়াআড়িভাবে হয় ফলে একটি দ্বিকোষী আদিভ্রুণ গঠিত হয় । আদিভূণ সবতলে বিভাজিত হয়ে পরিণত ভ্রূণ গঠন করে।
Read more